ধীর জীবন আর ধীবর
জীবনের মধ্যে ফেলতে ফেলতে যাই আমার বাস্তবতার বোধ। বোধকে বুঝি জাল বলেন আপনি?
বেঁচে থাকাকে আদল দিচ্ছে এক কোড, আর তার গতির বয়ান একটু বদলে গেলেই আমি নেই, একটু
হেরফের হলেই অন্য এক অনুষ্ঠানের ‘আমি’। আশ্চর্যের আগে কোনো ‘যেন’ লাগে না,
আশ্চর্যের কোনো ফ্রি-কিক নেই, কিন্তু-যদি নেই। আশ্চর্য হওয়ার ক্ষমতা এখনও হারিয়ে
ফেলিনি, এই বিশ্বাস নিয়ে আমি দৃশ্যের মুখোমুখি দাঁড়াই। দৃশ্যের আরেক নাম
খৃস্টাব্দ। দৃশ্যের আরেক গুণ বঙ্গাব্দ। আমি ‘আমি’ হই, ২০১৬-র অক্টোবর মাস হই।
বেঁচে থাকাকে যদি আরেকটু ঢিমে করতে পারতাম, একটা নির্জন কুটির যদি হত এই জীবন, যে
কোনো পাহাড়চূড়ায়, যে কোনো সমুদ্রের ধারে, এক বিরাট তুষারপ্রান্তরের কিনারে, এক
দমকা হাওয়ায় যার চাল উড়ে যেতে পারে, চুলো নিভে যেতে পারে, এমন এক জীবন যদি পেতাম,
যেখানে প্রতিটি সেকেন্ড একটি প্রহরের আয়ু, আজ আমি জানি কেন পৌরাণিক মানুষরা সহস্র
বৎসর বাঁচত, তাদের জীবন ছিল ঢের বেশি আশ্চর্যের, কারন ঢের বেশি ধীর, একটা বছর তো
শুধু একটাই বছর নয়, কিন্তু সেই ধীরতা অর্জন করতে আজ শুধু একজন গুহাবাসী সন্ন্যাসীই
পারেন। পথের ধারে
পড়ে থাকা পাথর গাছের তলায় গেঁথে গেলেই দেবতার জন্ম হয়, সমাজ ও সময়ের এই বোধ নিয়ে
জাদুর মুখোমুখি দাঁড়াই, কবিতার মুখোমুখি দাঁড়াই। জাদুর উপরে শুই, জাদু আমার উপরে শোয়। নিজেকে লাঙল গেঁথে
যাওয়া ক্ষেত মনে হয়। নিজেকে অজস্র কমিয়ে নিতে পারলে তবেই তো আমি-র ফসল, আমি-র
আশ্চর্য গোলাঘরে! মাঠের চেয়ে সবল হব, সেই সাধ্য কই! মাটির চেয়ে সরল হব, তত বাধ্য
নই। কল্পতরু তো একটি উদ্ভিদ, তাই না?